মাইকে ঘোষণা এলো, যোগ করা সময় ছয় মিনিট। এর পরই যেন কী হয়ে গেল। ব্রাজিল দলটা যেন গোলাবারুদের মতোই জ্বলে উঠল। কোস্টারিকা নব্বই মিনিট ধরে প্রতিরক্ষা রেখা আগলে রাখলেও শেষ কয়েকটা মুহূর্ত আর পারল না। ব্রাজিল সমর্থকদের আশাপূরণ হলো। যোগ করা সময়ে নেইমার এবং কটিনহোর দুর্দান্ত দুই গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল ব্রাজিল। নকআউট পর্বের পথে এগিয়ে গেল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। তবে এর আগে ঘটে গেল অনেক ঘটনা। ডি বক্সের ভিতরে ফাউল চেয়ে ডাচ রেফারি বিয়র্ন কুইপার্সের কাছ থেকে পেনাল্টি আদায় করে নিলেন নেইমার। কোস্টারিকা ফুটবলারদের প্রবল আপত্তির মুখে ভিডিও রেফারির ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দেন বিয়র্ন। ভিডিওতে দেখা গেল, ফাউলই হয়নি। নেইমার ইচ্ছা করেই পড়ে গেছেন। মুহূর্ত কয়েক পরই নেইমারকে হলুদ কার্ড দেখিয়ে সতর্ক করেন রেফারি। এ হলুদ কার্ডের বিরোধিতা করলে কটিনহোকেও হলুদ কার্ড দেখিয়ে সতর্ক করেন বিয়র্ন।
পেনাল্টি বাতিল হওয়ায় যতটা উল্লসিত হয়েছিলেন কোস্টারিকার সমর্থকরা তার চেয়ে কয়েক শ গুণ বেশি উৎসব করে ব্রাজিলীয়রা কটিনহোর গোলে। নেইমার খেলতে নেমেছেন। ব্রাজিল সমর্থকদের ভয় যেন মুহূর্তেই কেটে গেল। আগের দিনই কোচ বলে দিয়েছিলেন নেইমার খেলবেন। কোস্টারিকার বিপক্ষে সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে ম্যাচের প্রথমার্ধে একাই খেললেন নেইমার। প্রতিপক্ষের ডি বক্সে শট নিলেন ছয়টা! নেইমার ছাড়া বাকিরা সবাই মিলে প্রতিপক্ষের ডি বক্সে শট নিলেন কেবল ৪টা! নেইমার কেন ব্রাজিলের কাছে এতটা গুরুত্বপূর্ণ এ পরিসংখ্যান তার ব্যাখ্যা দিতে পারে। কিন্তু নেইমারও তো প্রথমার্ধে কোস্টারিকার প্রতিরক্ষা ভেঙে ব্রাজিলীয়দের উচ্ছ্বাসে ভাসাতে পারলেন না! ক্রোয়েশিয়ার কাছে আর্জেন্টিনার পরাজয় ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল ব্রাজিলীয়দের মনে। সে ভয়টা লুকোবার চেষ্টা করলেও খেলায় ধরা পড়ল ঠিকই। নেইমাররা খেলতে নেমে ভুল করলেন অনেক। ভুল পাস দিলেন। ভুল গোল করলেন। ভুল শট নিলেন দারুণ সুযোগ পেয়ে। অন্যদিকে কোস্টারিকার আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়েছে ব্রাজিলের প্রতিরক্ষা রেখা। বেশ কয়েকটা দারুণ সুযোগ পেয়েও গোল করতে পারেনি কোস্টারিকা। উত্তর আমেরিকার দল ওরা। ফুটবলে সর্বোচ্চ পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে খেললেও ব্রাজিলের মতো অতটা উঁচুতে কখনই উঠতে পারেনি। ভুলচুক ওদের হতেই পারে। কিন্তু নেইমাররা কী করলেন! প্রথমার্ধের ২৬ মিনিটে জেসুসের গোলটা অফসাইড ফ্ল্যাগের ইশারায় ভেসে গেল ফিনল্যান্ড উপসাগরে। আর দ্বিতীয়ার্ধে নেইমার তিনটি সহজ সুযোগ নষ্ট করলেন ডি বক্সে। এর মধ্যে দুটি তো পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকেই মিস করলেন। নাভাসকে একা পেয়েও লক্ষ্যভ্রষ্ট শট! নেইমার ঘাম ঝরিয়েছেন। প্রচণ্ড পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু তার খেলায় যেন সেই ধার নেই যা তিনি বার্সেলোনায় খেলেছেন। যেভাবে তিনি পিএসজিতে খেলেছেন। অন্তত তা-ই মনে হচ্ছিল শুরুর দিকে। কিন্তু সব বদলে গেল ম্যাচের শেষ দিকে। প্রতিপক্ষের ম্যান-টু-ম্যান মার্কিংয়ের পুরো রীতিটা বুঝতে কিছুটা সময় লাগল নেইমারদের। তবে বুঝে ওঠার পর ব্রাজিলকে রুখতে পারল না কোস্টারিকা। ম্যাচটা ব্রাজিল জিতলেও গোলপোস্টের সামনে কঠিন দায়িত্ব পালন করেছেন কেইলর নাভাস। রিয়াল মাদ্রিদের এই গোলরক্ষক ঘাসফড়িংয়ের মতোই লাফাচ্ছিলেন গোলপোস্টের সামনে। বাজপাখির মতো ছোঁ মেরে লুফে নিচ্ছিলেন বল।
মেসি পারেননি, আর্জেন্টিনাও পারেনি। নেইমার পারলেন, পারল ব্রাজিল। কোস্টারিকাকে হারিয়ে শেষ ষোলোর আশা ভালোভাবেই জিইয়ে রাখলো পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
গ্রুপ পর্বের গণ্ডি পেরিয়ে ফেবারিট তকমাটা নেইমাররা ধরে রাখলেন।